অনলাইন ডেস্কঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অনড় হয়ে রয়েছে। গত দু’দিন ধরে চলমান বিক্ষোভের তৃতীয় দিন আজ রবিবার (৩১ মার্চ) পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে ‘সহমত’ জানিয়েছেন বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার। তিনি দাবি পূরণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য সময় প্রয়োজন বলে জানান। তবে বিক্ষোভকারীরা বুধবার মধ্যরাতের পর ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক হিসেবে এক শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে তাকে শনিবার বেলা দুইটার মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সময় বেঁধে দেন। তারা আজ রবিবারও পরীক্ষা (টার্ম ফাইনাল) ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। এরপরও গত বুধবার মধ্যরাতের পর ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা গত শুক্রবার বেলা আড়াইটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন। ইমতিয়াজ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
বিক্ষোভকারীরা ইমতিয়াজকে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও হলের সিট বাতিলসহ তার সহযোগীদেরও বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে সময় বেঁধে দেয়। এ ছাড়া ‘বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা’ কেন কীভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার অনুমতি পেলেন, সে ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসনের সুস্পষ্ট জবাব, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতিসহ মোট পাঁচ দফা জানান। এসব দাবিতে পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
এ ঘটনায় ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে ৷
আরও পড়ুন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যার বিচার চেয়েছে তার পরিবার
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, গভীর রাতে কেউ (ক্যাম্পাসে) ঢুকলে এটা অবশ্যই অনিয়মতান্ত্রিক ৷ কে ঢুকেছে, তাঁকে আগে চিহ্নিত করতে হবে৷ তার জন্য সময় প্রয়োজন৷ যদি কোনো নিরাপত্তারক্ষী বহিরাগত ব্যক্তিদের ঢুকতে দিয়ে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
এদিকে শিক্ষার্থীদের একাংশ দাবি করছে, ‘ইসলামী ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মতো সংগঠনও বুয়েটে কার্যক্রম চালাচ্ছে।’
এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান তানভীর মাহমুদ স্বপ্নীল নামের এক বুয়েট ছাত্র ৷ তিনি দাবি করেন, তারা কোনো ছাত্রসংগঠনের পদধারী নন৷ সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাসে ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রমের’ বিষয়ে বলতে গিয়ে আরেক ছাত্র আশিক আলম বলেন, ‘বুয়েটে আবরার ফাহাদ ভাইয়ের সঙ্গে খুব খারাপ একটি ঘটনা ঘটেছে৷ আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই ৷ কিন্তু হিযবুত তাহরীর ও ছাত্র শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আবেগকে পুঁজি করে প্রকাশ্যেই নিজেদের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে৷ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হয়ে যিনিই কথা বলবেন, তাঁকেই ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে বারবার অত্যাচার করা হচ্ছে৷ ’
এদিকে আজ রবিবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। ‘মৌলবাদী গোষ্ঠীর কালোছায়া থেকে মুক্ত করে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির’ দাবিতে এবং বুয়েট কর্তৃক গৃহীত অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী, শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই সমাবেশ ডাকা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: প্রতম আলো
Leave a Reply